পেশা হিসেবে হিসাববিজ্ঞান

পেশা হিসেবে হিসাববিজ্ঞান

ব্যক্তিগত দক্ষতা, সুনাম বা অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জীবিকা অর্জনকে পেশা বলে। যেমন: ডাক্তার, উকিল, কৃষক, কামার-কুমার, কৃষিবিদ, প্রকৌশলী ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গ তাদের অর্জিত জ্ঞান বা দক্ষতা বা সুনামকে কাজে লাগিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তদ্‌রুপভাবে বর্তমান সময়ে বহু হিসাববিজ্ঞানী বা হিসাববিদ হিসাবশাস্ত্রের উপর তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সেবা প্রদান করছেন ও এর বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সে দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা হিসাববিজ্ঞানকে একটি পেশা বলতেই পারি।

শুধু তাই নয়, হিসাববিজ্ঞান আজ একটি আদর্শ পেশায় পরিণত হয়েছে। বর্তমান সময়ে পৃথিবীর বহু লোক এ পেশার সাথে জড়িত। আবার পেশা হিসেবে হিসাববিজ্ঞান যে একেবারে নবীন তা মোটেও নয়। শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে (১৭৫০ – ১৮৫০) যেদিন থকে বৃহৎ উৎপাদন শুরু হয়ে গেল, মালিকানায় আসলো পরিবর্তন, তখন থেকে হিসাব নিকাশের ক্ষেত্রেও দেখা গেল ব্যপকতা ও জটিলতা। মালিক পক্ষ ব্যর্থ হতে লাগলো সুষ্ঠু হিসাব রক্ষায়। সুষ্ঠু হিসাব-নিকাশের জন্য প্রয়োজন দেখা দিল একজন পৃথক হিসাবরক্ষকের। ফলে মালিক পক্ষ পারিশ্রমিকের বিনিময়ে নিয়োগ দিতে শুরু করলো পৃথক হিসাব রক্ষকের। সেই থেকে পেশা হিসাবে হিসাববিজ্ঞানের যাত্রা শুরু। পরবর্তী সময়ে, বিশেষ করে বিংশ শতাব্দীর দিকে এসে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি জন্ম নেয়ার ফলে হিসাববিজ্ঞানের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিকের ব্যপক পরিবর্তন ঘটে।

এক প্রতিষ্ঠানের সাথে অন্য প্রতিষ্ঠানের, এক দেশের কোম্পানির সাথে অন্য দেশের কোম্পানির হিসাব-নিকাশের মধ্যে তুলনা করে দেখার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয়। ফলে প্রয়োজন পড়ে প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিষ্ঠানে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে সমতা আনায়নের। ফলে সৃষ্টি হয় হিসাববিজ্ঞান নীতিমালার। যা হিসাববিজ্ঞানকে আরো গভীর তাত্ত্বিক দিকে নিয়ে যায় এবং হিসাব-নিকাশের জন্য প্রয়োজন দেখা দেয় দেয় এই গভীর তাত্ত্বিক জ্ঞানের। ফলে কদর বাড়তে থাকে হিসাববিদদের। এসকল কারণে বর্তমান সময়ে হিসাববিজ্ঞান পেশা সমগ্র বিশ্বে একটি বহুল প্রয়োজনীয় ও যুগোপযোগী পেশা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এ পেশার কদর এতই বেড়েছে যে এর চাহিদা মেটাতে এ পেশায় পেশাদারী ডিগ্রী প্রদানের ও পেশাটি নিয়ন্ত্রণের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। 

উদাহরণ:

যেমন: যুক্তরাষ্ট্রে American Institute of Certified Public Accounts (AICPA), যুক্তরাজ্যে Institute of Chartered Accountants of England and Wales (ICAEW), বাংলাদেশে Institute of Chartered Accountants of Bangladesh (ICAB), Institute of Cost and. Management Accountants of Bangladesh (ICMAB), ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বর্তমান সময়ে হিসাববিজ্ঞান পেশাটি দুটি ভাগে বিভক্ত: এর একটি হলো আর্থিক হিসাববিজ্ঞান, অর্থাৎ আর্থিক বিবরণীসমূহ নিরীক্ষা। দ্বিতীয়টি হলো উৎপাদন ব্যয় হিসাব নিরীক্ষা। নিম্নে হিসাববিজ্ঞান পেশা দুটির উৎপত্তি, প্রসার, বর্তমান অবস্থা ও বাংলাদেশে পেশা দুটির অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

আর্থিক হিসাববিজ্ঞান নিরীক্ষা, অর্থাৎ চ্যাটার্ড এ্যাকাউন্টাট (CA) পেশা: হিসাববিজ্ঞান পেশার এই দিকটির প্রচলন বেশ আগে থেকেই। প্রাচীন কালেই কারবার প্রতিষ্ঠানের রক্ষিত হিসাবের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পৃথক ও নিরপেক্ষ বিচারকের নিকট রক্ষিত হিসাবের বর্ণনা দেয়া হতো।

১৮৪৪ সালে ব্রিটেনে কোম্পানি আইনের দ্বারা শেয়ারহোল্ডারগণের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য পরীক্ষিত হিসাব বিবরণীকে বার্ষিক সভায় পেশ করার বিধান রাখা হয়। এর জন্য প্রয়োজন পড়ে হিসাববিজ্ঞানের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক বিষয়ে অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন হিসাবরক্ষকের। যার প্রয়োজন মেটাতে ১৮৫৪ সালে ইংল্যান্ডে পৃথিবীর সর্বপ্রথম সনদপ্রাপ্ত হিসাববিজ্ঞানী সংস্থা (Chartered Accountants Institute) প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখান হতে আর্থিক হিসাববিজ্ঞান পেশা হিসেবে রাজকীয় স্বীকৃতি লাভ করে। পরবর্তীতে ১৮৮০ সালে লন্ডন ইনস্টিটিউট অব এ্যাকাউন্টস গঠিত হওয়ার পর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে হিসাববিজ্ঞান, পেশা হিসাবে আরো দ্রুত বিকশিত হতে থাকে। ১৯০০ সালের নতুন কোম্পানি আইনে নিরীক্ষকের যোগ্যতা, ক্ষমতা ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিধান রাখা হয়।

যদিও ব্রিটিশদের হাতে হিসাববিজ্ঞান পেশার গোড়া পত্তন ঘটে, কিন্তু আমেরিকানরা এ পেশার উৎকর্ষতা আনায়ন করে এবং দ্রুত উন্নয়ন ঘটায়। ১৮৮২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে Institute of Accountants এবং ১৮৮৭ সালে American Institute of Certified Public Accounts (AICPA) গঠন করা হয়। বর্তমান সময়ে এই প্রতিষ্ঠানটি (AICPA) হিসাববিজ্ঞান পেশায় মুরুব্বি হিসেবে কাজ করছে।

বাংলাদেশের ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনে কোম্পানির আর্থিক বিবরণীর নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং যার জন্য প্রয়োজন চ্যাটার্ড এ্যাকাউন্টাট (CA) ডিগ্রী ধারী ব্যক্তি। অর্থাৎ, চ্যাটার্ড এ্যাকাউন্টাট (CA) ডিগ্রী প্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কোন হিসাবরক্ষক বা ব্যক্তি দ্বারা কোম্পানির হিসাব বিবরণী নিরীক্ষা করা যাবে না। আমাদের দেশে Institute of Chartered Accountants of Bangladesh (ICAB) চ্যাটার্ড এ্যাকাউন্টাট (CA) ডিগ্রী প্রদান করে থাকে।

উৎপাদন ব্যয় হিসাববিজ্ঞান নিরীক্ষা, অর্থাৎ কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্টাট (CMA) পেশা হিসাববিজ্ঞান পেশার এই দিকটির প্রচলন বেশি দিনের নয়। ১৯১৯ সালে ব্রিটেনে “The Institute of Cost and Management Accountants” নামে একটি পেশাদারী প্রতিষ্ঠান গঠনের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যয় হিসাববিজ্ঞান নিরীক্ষা পেশার গোড়া পত্তন হয়। প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাজ্যের বর্তমান “Chatered Institute of Management Accountants (CIMA)” এর পূর্বসূরি।

 এই পেশার প্রসারের জন্য ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠত হয় “Institute of Management Accountants (IMA)”। উৎপাদন ব্যয় হিসাববিজ্ঞান নিরীক্ষার বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে IMA এর আওতাধীন “Certified Management Accounting” নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে যুক্তরাষ্ট্রে কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্টাট (CMA) ডিগ্রী লাভ করা যায়। তবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠান “Cost Accounting Standard Board (CASB)”, উৎপাদন ব্যয় হিসাব নিরীক্ষার আদর্শ মান নির্ধারণ করে থাকে।

বাংলাদেশে ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ২২০ ধারায় কিছু বিশেষ ধরনের প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যয় নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোম্পানি আইনের এ ধারা পূরণের উদ্দেশ্যে অত্র আইনের ২২৬ (৪) ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালের ১৮ নভেম্বর কস্ট অডিট রিপোর্ট বিধিমালা জারি করে। 

মূলত: এর মাধ্যমেই বাংলাদেশে উৎপাদন ব্যয় হিসাববিজ্ঞান নিরীক্ষার ভিত্তি স্থাপিত হয়। কোম্পানি আইনের ধারা মোতাবেক উৎপাদন ব্যয় নিরীক্ষা জন্য প্রয়োজন কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্টাট (CMA) ডিগ্রী ধারী ব্যক্তি। অর্থাৎ, কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্টাট (CMA) ডিগ্রী প্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কোন হিসাবরক্ষক বা ব্যক্তি দ্বারা উক্ত বিশেষ ধরনের প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যয় নিরীক্ষা করা যাবে না। আমাদের দেশে Institute of Cost and Management Accountants of Bangladesh (ICMAB) কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্টাট (CMA) ডিগ্রী প্রদান করে থাকে।

What is relevant cost analysis ? প্রাসঙ্গিক ব্যয় বিশ্লেষণ কি ?

ব্যবস্থাপনা হিসাববিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো প্রাসঙ্গিক ব্যয় বিশ্লেষণ (Relevant Cost Analysis)। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ কার্যক্রমে

Read More »

Wh question rules in bangla

Wh question বলতে কি বুঝ? Wh Question হলো সেই প্রশ্নগুলো যা “Wh” দিয়ে শুরু হয় (যেমন: What, Who, When, Where,

Read More »

SSC Math Suggestion 2025 PDF

এসএসসি গণিত পরীক্ষার সাজেশন পিডিএফ সহ: প্রিয় এসএসসি পরীক্ষার্থীবৃন্দ, তোমাদের জন্য গণিতের ফাইনাল সাজেশন করা হয়েছে। আশা করি এখান থেকে

Read More »

1 thought on “পেশা হিসেবে হিসাববিজ্ঞান”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top